সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০১ অপরাহ্ন

চাপে সরকারবিরোধী ইসলামপন্থি দল

চাপে সরকারবিরোধী ইসলামপন্থি দল

স্বদেশ ডেস্ক:

মামলা ও গ্রেপ্তারে কোণঠাসা দেশের বৃহৎ অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। অরাজনৈতিক সংগঠনটির বেশিরভাগ কারাবন্দি নেতাকর্মী বিভিন্ন ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই জামায়াতে ইসলামী। নানামুখী চাপে রয়েছে সরকাবিরোধী অন্য ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোও।

কয়েকটি ইসলামপন্থি দলের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামিক দলগুলোর আধিপত্য থাকায় ‘সরকারের চাপে’ গত ২৬ এপ্রিল হেফাজতের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর নতুন কমিটি গঠন করে সংগঠনটি। চাপে থাকায় ইসলামিক দলগুলো ও কওমি মাদ্রাসার আলেমদের একটি অংশ এখন সরকারি মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তাদের কেউ মামলা থেকে বাঁচতে, আবার কেউ নিজের প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় সরকারের বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরপাকড়ে বেশি চাপে পড়ে হেফাজতে থাকা ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ তিনটি দল। অন্য দুটি দল হলো প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস। এই দল তিনটির মহাসচিবসহ শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে রয়েছেন কারাগারে। এর বাইরে প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী

ঐক্যজোটের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং দলটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কিছু নেতাকর্মীও রয়েছেন কারাগারে। এই দলটিও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত।

ইসলামি দলগুলোর একাধিক নেতা জানান, এই সময়ে ইসলামপন্থি দলগুলো কতটা সংকটে আছে, তার দৃষ্টান্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়ার ঘটনা। গত ১৪ জুলাই দলটি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মামলায় জমিয়তের ৬০ জন নেতাকর্মী আসামি হন। এ পরিস্থিতিতে দলটি জোট ছাড়তে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, আমাদের ৬০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কারাগারে থাকা ৩১ জনের মধ্যে ১৭ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এই মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টি আমাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মামুনুল হক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একটি অংশের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসাও সম্প্রতি হাতছাড়া হয়ে গেছে। মামুনুল হক বর্তমানে কারাগারে।

প্রয়াত হাফেজ্জী হুজুরের দল খেলাফত আন্দোলন বর্তমানে সরকারের সঙ্গে সখ্য রেখে চলছে বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়। এর বাইরে নিবন্ধিত ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামি আন্দোলন নেই কোনো জোটে।

প্রায় ১০ বছর ধরে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই জামায়াতে ইসলামী। জানা গেছে, দেড় বছর ধরে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে অনলাইনে। নেতারা প্রায় প্রতিদিনই ভার্চুয়াল সভা অব্যাহত রেখেছেন। এই মুহূর্তে দলের রুকন সম্মেলন চলছে।

জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, নানা উপায়ে দলের নিয়মিত কাজগুলো চললেও প্রতিনিয়ত সরকারি বাধাবিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ দলটির ১৫ জন কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা। এর মধ্যে জামায়াতের নতুন পীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) নামের নতুন রাজনৈতিক দলটি। জামায়াতের একদল নেতাকর্মী গত বছরের ২ মে প্রতিষ্ঠা করেন এবি পার্টি। দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪১ জেলায় কমিটিও করেছে এবি পার্টি। কমিটির প্রায় অধিকাংশ সদস্যই জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের।

ইসলামি দগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে রয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামি আন্দোলন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও অংশ নিচ্ছে দলটি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলটি কোনো উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের ২০৪টির মধ্যে ১৪০টিতে তারা প্রার্থীও দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটিতে তারা জিতেছে। দলটির অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের বাধায় তারা ৬৪টি ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে পারেনি।

ইসলামি আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, সামগ্রিকভাবে সবাই চাপে আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামি দলগুলো নজরদারিতে আছে। এটা আমাদের জন্য বড় সংকট। এক সময় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী ছিল মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামি ঐক্যজোট। এখন কওমি অঙ্গনে আগের অবস্থানে নেই দলটি। মুফতি আমিনীর মৃত্যুর পর ইসলামি ঐক্যজোট ২০১৬ সালে বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর দলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন আবদুল লতিফ নেজামী। ২০২০ সালে ১২ মে মারা যান তিনি। এর পর ফজলুল হক আমিনীর ছেলে হাসনাত আমানীকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। গত এক বছরেও দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার কোনো সভা হয়নি।

ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ দাবি করেন, শুরার সর্বসম্মত অনুমোদনে হাসনাতকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে যতটুকু কার্যক্রম থাকা দরকার, ততটুকু কার্যক্রম তাদের আছে।

দলটির একটি সূত্র জানায়, মুফতি আমিনীর মৃত্যুর পর অন্তর্দ্বন্দ্ব, পারিবারিক বিরোধসহ নানামুখী বিতর্কে ইসলামি ঐক্যজোটের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সহিংসতার মামলায় আসামি হয়ে জোবায়ের আহমদ ও সাখাওয়াত হোসাইন কারাবন্দি এবং জসিম উদ্দিন আছেন আত্মগোপনে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877